নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়।
বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতা যান চিকিৎসার জন্য।
মাদারীপুর হাইস্কুলে ভর্তি হন সপ্তম শ্রেণীতে।
গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি হলেন।
মিশন স্কুল পরিদর্শনে আসেন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এ বছরে প্রথম বারের মত কারাবরণ করেন শেখ মুজিব। সাত দিন জেল খেটেছেন।
গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন। দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে। থাকতেন ওই কলেজের বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। গঠন করেন গণতান্ত্রিক যুবলীগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। কয়েকবার গ্রেফতার হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ও ছাত্রদের ধর্মঘটে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন শেখ মুজিব। এই অপরাধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন। কারাগারে থাকা অবস্থায় আওয়ামী মুসলিম লীগ দলটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হন।
রাষ্ট্রভাষা আন্দলনের সময় জেলে বন্দী ছিলেন। ফরিদপুর জেলে বদলী করা হয় তাঁকে। আমরণ অনশন শুরু করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়ার পর আওয়ামী মুসলিম লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।
গোপালগঞ্জ থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মে মাসে গঠিত পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীসভায় মাত্র ৩৪ বছর বয়সে সমবায় ও কৃষি উন্নয়ন মন্ত্রী হন শেখ মুজিব।
পাকিস্তান গণপরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে নির্বাচিত হন শেখ মুজিব। একই বছর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে গঠিত নতুন মন্ত্রীসভায় শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী হন শেখ মুজিব।
শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১০ ডিসেম্বর মুক্তি দিয়ে জেলগেট থেকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।
দুই বছরের কারাদন্ড হয় মুজিবের, হাইকোর্টে জামিন লাভ করেন। লাহোরে বিরোধী দলীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগ থেকে যোগ দেন শেখ মুজিব। ১০ ফেব্রুয়ারি এই জাতীয় সম্মেলনে ৬-দফা উত্থাপন করেন শেখ মুজিব। এই বছরেই শেখ মুজিবুর রহমানকে সভাপতি করে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়।
শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামী এবং ৩৫ সাধারণ ও বেসামরিক নাগরিককে অভিযুক্ত করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। বিচার শুরু হয় বিশেষ ট্রাইব্যুনালে।
২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিব সহ সকল বন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
জুনে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় দুই পাকিস্তানের উভয় কমিটিতে সভাপতি হন বঙ্গবন্ধু। রেসকোর্সের জনসভায় ‘জয় বাংলা' স্লোগানে ভাষণ শেষ করলেন শেখ মুজিব। ডিসেম্বরের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে ১৬২ আসনে। আর, প্রাদেশিক পরিষদে ২৯৮ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ২৮৮ আসন।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন শেখ মুজিব। বললেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিত হত্যা শুরু করে। মৃত্যু ও ধ্বংসের নগরীতে পরিণত হয় ঢাকা। রাত ১২ঃ২০ মিনিটে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ওয়ারল্যাস ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন’। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন তিনি। রাত ১ঃ০০ টার কিছু পরে গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয় ও বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপ্রধান করা হয়। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবসে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনী আত্নসমর্পণ করে।
৮ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়া হয়। ৮ জানুয়ারি বিশেষ বিমানে করে লন্ডন যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান। ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানে ৯ জানুয়ারি দিল্লি আসেন বঙ্গবন্ধু। বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান। ১০ জানুয়ারি ঢাকা আসেন বঙ্গবন্ধু। রেসকোর্সের জনসভায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ৪ নভেম্বর ১৯৭২ বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়। মূলনীতি ছিল - বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্ম-নিরপেক্ষতা।
মার্চের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে নতুন মন্ত্রীসভা গঠন করেন। বিশ্ব শান্তিতে অবদানের জন্য ‘জুলিওকুরী’ পদকে ভূষিত হন।
সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভ করেন বাংলাদেশ। জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রথমবারের মত বাংলায় ভাষণ দেন শেখ মুজিব।